বর্ষা কালে ডাকত ব্যাঙ, গ্যাঙর গ্যাং,গ্যাঙর গ্যাং। বিছানায় শুয়ে শুনতে পেতাম কচুপাতায় টিপ টাপ পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা। জানলা দিয়ে বৃষ্টির গুঁড়ো ঢুকে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার চোখ আর মুখ । জানলা বন্ধ করতাম না। অন্ধকার মুড়ি দিয়ে শুনতাম ব্যাঙের ডাক। বিভিন্ন ব্যাঙের বিভিন্ন ডাক। কতগুলো ডাকত কট কট শব্দে, তার মাঝে সঙ্গত ধরত কোলা ব্যাং, সে ডাকত গ্যাং গ্যাং করে। সামনের রাস্তায় জমা জল, নীল রঙা রাস্তা দিয়ে সপ সপ শব্দে কে যেন টেনে টেনে হাঁটছে।
বৃষ্টি যত বাড়ে, ব্যাঙের ডাকও তীব্র হয়। মশারি উড়ছে বৃষ্টি ভেজা ঠাণ্ডা হাওয়ায়। শীত বাড়ছে বুকের ভিতর। কচুপাতার উপর এবার জলের শব্দ সর সর করে পড়ছে কারনিশ বেয়ে। হাওয়ার সোঁ সোঁ আওয়াজ আরও বাড়ল। হাওয়ার ঝাপ্টায় কার বাড়ির জানলা ঝাপটে পড়ল সশব্দে। চরা চরে কোথাও আর কোন শব্দ নেই। বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে ডেকে চলেছে ব্যাঙের দল। খোলা জানলা দিয়ে সামনের নারকেল গাছগুলো দেখা যাচ্ছে। ওরা বৃষ্টি-হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে নাচছে।
মনে হল ঘরের মধ্যে কি যেন একটা দুলে উঠল! বুকের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেল একটা ঠাণ্ডা স্রোত, সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। নাঃ, মনের ভুল। দেওয়ালের পেরেকে
লাগানো আমার পাঞ্জাবী নড়ে উঠল হাওয়ায়। চোখ বন্ধ করে শুনছি বৃষ্টি আর ব্যাঙের আওয়াজ। ঠাণ্ডা হাওয়ায় চোখ জুরিয়ে এল।
আজ হারিয়েছি সেই বৃষ্টি মুখর রাত, যখন ব্যাঙের ডাক শুনে চোখ জুড়ে নেমে আসত ঘুম।